ইয়াসির ইয়ামীন: লর্ডসে ভারতীয় দল শোচনীয়ভাবে হেরেছে- এটি এখন পুরনো খবর। শনিবার (১৮ আগস্ট) শুরু হতে যাচ্ছে ট্রেন্টব্রিজ টেস্ট। এখন পর্যন্ত গরম খবর হলো- ভারতীয় শিবিরে পরিবর্তন দরকার। কাকে বাদ দিয়ে কাকে খেলানো হবে, এই নিয়ে বিশেষজ্ঞ-বিশ্লেষণের কমতি নেই। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সাবেক ক্রিকেটারদের চোখেও ঘুম নেই।
বলা হচ্ছে, যশপ্রীত বুমরাহ ফিট, তাঁকে খেলানো হতে পারে ট্রেন্টব্রিজে। জোরালো দাবি উঠেছে, আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্থকে খেলানো হোক। সুনীল গাভাসকারও ঋষভের পক্ষে জোরালো যুক্তি দিয়েছেন। ফিরতে পারেন ভুবনেশ্বর কুমারও!
চার বছর আগের ইংল্যান্ড সফরে মুরলী বিজয় সবচেয়ে ভালো খেলেছিলেন। এবার ফর্মে নেই। লর্ডস টেস্টে শিখর ধাওয়ানকে বাদ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু কে এল রাহুল, মুরলী বিজয়দের ব্যাটিং দেখে উল্টো এখন বলাবলি হচ্ছে, বেচারা শিখর ধাওয়ান কতোই বা খারাপ খেলছিলো? তাই এবার খেলানো হোক করুণ নায়ারকে। আড়াই দিনে হারের চেয়ে খারাপ আর কী হবে!
ভারতীয় এক ক্রীড়া সাংবাদিকের ভাষ্য- ‘ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে রবিবার (১২ আগস্ট) বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় টেস্টে মাত্র আড়াই দিনের মধ্যে ‘টিম ইন্ডিয়া’র গগন ফাটানো তথাকথিত মহাতারকাদের ক্লীবের মতো আত্মসমর্পণ করতে দেখে একজন ভারতীয় হিসেবে বেজায় লজ্জিত না হয়ে উপায় নেই। এসব ক্রিকেটারকে নিয়ে মহাকাব্য লেখে ক্রিকেট কলমচিরাও। এই ব্যর্থ তারকাদের মিডিয়ার একাংশ মাথায় তুলেও নাচে।
খেলায় হার-জিত আছে। তাই বলে বিনা প্রতিরোধে সাবেক শাসকদের দেশে এমন নতজানু হতে বিরাট বাহিনীর কি লজ্জা করে না?
মুরলী বিজয়, শিখর ধাওয়ান, আজিঙ্কা রাহানে, দীনেশ কার্তিকদের অবিলম্বে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো উচিত। এর বদলে ঋষভ পন্থ,
শ্রেয়াস আয়ার, মায়াঙ্ক আগরওয়ালদের খেলানো হোক। অবিলম্বে আজিঙ্কা রাহানেকে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে প্রোমোট করা হোক।’
প্রশ্ন হলো- মুরলী বিজয়, শিখর ধাওয়ান, আজিঙ্কা রাহানে, দীনেশ কার্তিক- টপ অর্ডারের কেউই তো রান পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে রদবদল কি খুব কাজে লাগবে? কার পরিবর্তে কাকে আনা হবে? বাদ দিতে গেলে তো সবাইকে বাদ দিতে হয়।
একজন ব্যর্থ হলে সেই অভাব ঢাকা দেওয়া যায়। পুরো ব্যাটিং লাইন ব্যর্থ হলে? রিজার্ভ বেঞ্চ কি কখনও প্রথম একাদশের বিকল্প হতে পারে?
ওপেনিংয়ে গন্ডগোলের সমাধান-সূত্রই-বা তাহলে কী? স্পিন বিভাগে একজন নাকি দু’জন খেলানো হবে, এই অঙ্কেও জেরবার ‘টিম ইন্ডিয়া’। দ্বিতীয় টেস্টের পর তো স্পষ্ট বুঝা গেলো, লর্ডসে দরকার ছিলো না কুলদীপ যাদবকে। তবু তাঁকে খেলানো হয়েছিলো।
কেন?
ও হ্যাঁ, দল জানিয়েছে, এজবাস্টনে কুলদীপের অভাব অনুভূত হয়েছিলো। চমৎকার! এজবাস্টনের অভাব তাহলে লর্ডসে মেটানো যায়? তাহলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় টিম মিটিংয়ের কী প্রয়োজন?
এছাড়া ভারতের হাতে আর কারা ওপেনার আছে? চেতেশ্বর পূজারা’র ইংল্যান্ডে সর্বোচ্চ স্কোর এখনো পর্যন্ত ৫৫। লর্ডসে ৮৭ বল খেলে করেছেন ১৭। মাত্র একটি বাউন্ডারি। স্ট্রাইক রেট কুড়িরও নিচে। আজিঙ্কা রাহানে চার বছর আগে লর্ডসে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এবারের সফরে এখনো পর্যন্ত দিশাহীন।
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমও নতুন নতুন সমীকরণ উপস্থাপন করছে। লিখছে- ইংল্যান্ড সফরে একেকজন ক্রিকেটারের পেছনে থাকা, খাওয়া, যাতায়াত মিলিয়ে ভারতীয় বোর্ড বিপুল অর্থ খরচ করছে। ক্রিকেটাররা আগে ইকোনমি ক্লাসে যাতায়াত করতেন। আপগ্রেড করে তা এখন বিজনেস ক্লাস করা হয়েছে। বিরাট কোহলিদের বার্ষিক চুক্তির অর্থও কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু মাঠে নেমে তার প্রতিফলন কী দেখা যাচ্ছে? ক্রিকেটপ্রেমীদের দাবি, পারফরম্যান্সের বিচারে ক্রিকেটারদের চুক্তির অর্থ নির্ধারণ করা হোক। সিনিয়রদের নিয়ে যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে জুনিয়রদের নিয়ে খেললে এর চেয়ে খারাপ কিছু হবে না। তাই সুযোগ দেওয়া হোক ফর্মে থাকা তরুণ ক্রিকেটারদেরও।
পক্ষান্তরে ইংল্যান্ড দল অপরিবর্তিতই থাকছে। বাড়তি যোগ হচ্ছেন বেন স্টোকস। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, লর্ডসে ভরাডুবির যন্ত্রণা ভুলবার আগেই ‘টিম ইন্ডিয়া’র সদস্যদের মনে হয়তো ভয় গেঁথে গেছে, ট্রেন্টব্রিজে অ্যান্ডারসন-ওকস-স্টোকস-ব্রডদের খেলতে পারবো তো?
নাকি ৫-০-তে হোয়াইটওয়াশ লেখা রয়েছে ললাটে?
লর্ডসে বাংলাদেশের চেয়েও ছোট ভারত
বাংলাদেশের প্রধান দৈনিক ‘প্রথম আলো’ চমৎকার একটি রিপোর্ট ছেপেছে লর্ডস টেস্টের পর। প্রণিধানযোগ্য বিবেচনা করে সামান্য সম্পাদনাসহ পাঠকদের জন্য এখানে সংক্ষেপে তুলে দিলাম।
লর্ডসে প্রথম ইনিংসে ৩৫.২ ওভারে ভারত অলআউট হলো ১০৭ রানে। ১০০ বছরের মধ্যে এটি লর্ডসে প্রথমে ব্যাট করে দ্বিতীয় সংক্ষিপ্ততম ইনিংস। লর্ডসে অবশ্য একবার ১৭ ওভারেও অলআউট হয়েছিলো ভারত।
বাংলাদেশের প্রথম ইংল্যান্ড সফরে খেলা হয়েছে মে-জুনে। আর্লি সামার মানেই ইংল্যান্ডের কন্ডিশন ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিনতম। আর ৫ বছর বয়েসি একটি টেস্ট খেলুড়ে দলের জন্য সেটি ছিলো এশিয়ার চেনা কন্ডিশনের বাইরে মাত্র ১৩তম টেস্ট। সেদিন লর্ডসে বাংলাদেশ ৩৮.২ ওভারে ১০৮ রানে অলআউট হয়েছিলো। ১০০ বছরের মধ্যে এটি ছিলো লর্ডসে প্রথমে ব্যাট করে দ্বিতীয় সংক্ষিপ্ততম ইনিংস।
এবার লর্ডসে বাংলাদেশের চেয়েও ছোট ইনিংস উপহার দিলো ভারত। লর্ডসে প্রথমে ব্যাট করে সবচেয়ে ছোট ইনিংসটির রেকর্ড জিম্বাবুয়ের। ৩০.৩ ওভারে ৮৩ রানে অলআউট হয়েছিলো তারা।
লর্ডসে এর আগে একবার ভারত অলআউট হয়েছিলো মাত্র ১৭ ওভারে। সেটি ছিলো ম্যাচের তৃতীয় ইনিংস। এবার লর্ডসের প্রথম ইনিংসের আগে ১৯৯০ সালের পর ভারত কখনো লর্ডসে ৬২ ওভারের নিচে কোনো ইনিংসে অল-আউট হয়নি। ২০০০ সাল থেকে কমপক্ষে ৭৭ ওভার ব্যাট করেছে এই মাঠে।
১৯৫২ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ম্যাচের দ্বিতীয় ও নিজেদের প্রথম ইনিংসে ভারত অল-আউট হয়েছিলো ২১.৪ ওভারে। ২০১৪ সালে ওভাল টেস্টের তৃতীয় ইনিংসে ভারত টিকতে পেরেছিলো মাত্র ২৯.২ ওভার। এরপরই এবারের লর্ডস বিপর্যয়। ইংল্যান্ডের যে কোনো মাঠে এটি ভারতের চতুর্থ সংক্ষিপ্ততম ইনিংস।
১০০ বছরে লর্ডসে প্রথমে ব্যাট করা সংক্ষিপ্ত ইনিংস
দল ওভার স্কোর সাল ফল
জিম্বাবুয়ে ৩০.৩ ৮৩ ২০০০ হার
ভারত ৩৫.২ ১০৭ ২০১৮ –
বাংলাদেশ ৩৮.২ ১০৮ ২০০৫ হার
অস্ট্রেলিয়া ৪০.২ ১৯০ ২০০৫ জয়
ইংল্যান্ড ৪২.৩ ৭৭ ১৯৯৭ ড্র
ভয়েস বাংলা # ইই