চাঁদাবাজির রাজত্বে 'পরিবহন সম্রাট' এনায়েত উল্লাহ: ১২৫ কোটি টাকা ব্যাংক হিসাবে, জব্দ ১৯০টি গাড়ি

May 5, 2025 - 06:42
চাঁদাবাজির রাজত্বে 'পরিবহন সম্রাট' এনায়েত উল্লাহ: ১২৫ কোটি টাকা ব্যাংক হিসাবে, জব্দ ১৯০টি গাড়ি

বাংলাদেশের পরিবহন খাতে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থের পাহাড় গড়ে তোলা আলোচিত ব্যবসায়ী খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বর্তমানে পলাতক। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে তার ও তার পরিবারের নামে ৪০টি ব্যাংক হিসাবে ১২৫ কোটি টাকার বেশি অর্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে আদালতের নির্দেশে তার পরিবারের মালিকানাধীন ১৯০টি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।

দুদকের দায়ের করা আবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে। তিনি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ করতেন। সড়ক-মহাসড়কে প্রভাব বিস্তার করে এই সময়ের মধ্যেই তিনি এবং তার ঘনিষ্ঠরা বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এনায়েত উল্লাহ, তার স্ত্রী নার্গিস সামসাদ, ছেলে রিদওয়ানুল আশিক নিলয় ও মেয়ে চামশে জাহান নিশির নামে বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ টাকা গচ্ছিত রয়েছে। এককভাবে এনায়েত উল্লাহর নামে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের একাধিক হিসাবে রয়েছে ১৬ কোটি টাকারও বেশি এফডিআর, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ৩৫ কোটির বেশি, ব্যাংক এশিয়া, সিটি ব্যাংক, সাউথইস্ট ও এনআরবিসি ব্যাংকসহ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য মিলেছে।

এছাড়া তার প্রতিষ্ঠান এনা ট্রান্সপোর্ট, এনা মোটরস, এনা এন্টারপ্রাইজ ও স্টারলাইন স্পেশাল লিমিটেডের হিসাবেও রয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা। শুধু ব্যাংক আল-ফালাহর ধানমন্ডি শাখাতেই তার প্রতিষ্ঠানের তিনটি হিসাবে মোট প্রায় ৪৮ কোটি টাকা জমা থাকার তথ্য মিলেছে।

সম্পদের বিবরণ অনুযায়ী, রাজধানীর মিরপুর, ধানমন্ডি, বসুন্ধরা সিটি, কেরানীগঞ্জ ও রূপগঞ্জে রয়েছে বাড়ি, জমি ও বাণিজ্যিক স্থাপনা। গাজীপুর ও ফেনীতেও রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পত্তি।

দুদক সূত্র জানায়, ২০২০ সাল থেকে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়। এক পর্যায়ে ২০২১ সালে সম্পদের বিবরণ চেয়ে নোটিশ দেওয়া হলে তিনি ২১৬ কোটি টাকার সম্পদ ঘোষণা দেন, যার উৎস হিসেবে ‘এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রা.) লিমিটেড’, ‘সোলার এন্টারপ্রাইজ’ ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেন।

বর্তমানে এনায়েত উল্লাহ তার পরিবারসহ সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। অভিযোগ রয়েছে, অনুসন্ধান শুরুর পর থেকেই তারা সম্পদ বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে আদালতের আদেশে তাদের নামে নিবন্ধিত ১৯০টি যানবাহন জব্দ করা হয়েছে।

পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস ও মিনিবাস থেকে প্রতি বছর প্রায় ১,০৫৯ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এই অর্থের অংশ পায় বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী, পুলিশ সদস্য, বিআরটিএ কর্মচারী এবং স্থানীয় প্রভাবশালীরা। টিআইবির মতে, এই চাঁদাবাজি না থাকলে যাত্রীদের গুণতে হতো না অতিরিক্ত ভাড়া—প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া কমানো সম্ভব হতো।

দুদক জানিয়েছে, অনুসন্ধান চলমান রয়েছে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।