সারা দেশে ইঞ্জিন ও কোচ সংকটে ৭০টি ট্রেন বন্ধ

May 5, 2025 - 06:48
সারা দেশে ইঞ্জিন ও কোচ সংকটে ৭০টি ট্রেন বন্ধ

সারা দেশে ইঞ্জিন, কোচ এবং জনবল সংকটের কারণে বর্তমানে ৭০টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রেনগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩৩টি কমিউটার, ২১টি লোকাল, ১০টি মিশ্র, ৪টি মেইল এবং ২টি শাটল ট্রেন। এসব ট্রেনের বেশিরভাগই ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় বন্ধ করা হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সেগুলো পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়নি।

রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইঞ্জিন ও কোচের তীব্র ঘাটতির পাশাপাশি জনবল সংকটের কারণে এসব ট্রেন চালু করা যাচ্ছে না। রেলের পূর্বাঞ্চলে বর্তমানে ৩২টি ট্রেন এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৩৮টি ট্রেন বন্ধ রয়েছে।

পূর্বাঞ্চলের মধ্যে ময়মনসিংহ-দেওয়ানগঞ্জ বাজার, ময়মনসিংহ-ভৈরববাজার, সিলেট-ছাতকবাজার, আখাউড়া-সিলেট, লাকসাম-চাঁদপুর, লাকসাম-নোয়াখালী, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-হাই-টেক সিটি এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের একাধিক লোকাল ও কমিউটার ট্রেন বন্ধ রয়েছে।

অন্যদিকে, পশ্চিমাঞ্চলে রাজবাড়ী, ঈশ্বরদী, সান্তাহার, পার্বতীপুর, চিলাহাটি, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, রংপুর ও বুড়িমারী রুটে মিশ্র, লোকাল, মেইল এবং শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। এর মধ্যে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের দুটি শাটল ট্রেন এবং সান্তাহার-পঞ্চগড় রুটের মেইল ট্রেন উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী বন্ধন, মিতালি ও মৈত্রী এক্সপ্রেসসহ মোট ছয়টি আন্তর্জাতিক ট্রেন চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে আরও অন্তত ৯০টি ইঞ্জিন অতীব প্রয়োজন। প্রথম ধাপে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ৩০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “বন্ধ ট্রেনগুলো পুনরায় চালু করতে হলে নতুন ইঞ্জিন সংগ্রহই এখন প্রধান অগ্রাধিকার।”

বাংলাদেশ রেলওয়ের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, বর্তমানে রেলের বহরে রয়েছে ২৯৭টি ইঞ্জিন—এর মধ্যে ১৬৭টি মিটারগেজ ও ১৩০টি ব্রডগেজ। তবে এসব ইঞ্জিনের অর্ধেকের বেশি, অর্থাৎ ৫১ শতাংশই অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল অতিক্রম করেছে। ৮৪টি ইঞ্জিনের বয়স ৪০ বছরের বেশি, যা রেলের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে চালু রয়েছে ২৭৫টি ট্রেন। এর মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেন ১২০টি, কমিউটার ও মেইল ট্রেন ১২৮টি, কনটেইনার ট্রেন ৮টি এবং গুডস ট্রেন ১৯টি। তবে এসব ট্রেন পরিচালনায়ও রেলকে নিয়মিতভাবে ইঞ্জিন সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে।

রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন ইঞ্জিন ও কোচ দ্রুত সংগ্রহ না করা গেলে রেলসেবা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে এবং সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়বেন।